রম্য- রসভঙ্গ

রসভঙ্গ
-পায়েল সাহু

 

 

দত্ত বাবুকে মনে আছে তো সবার?
সেই যে আগের বার পাড়াতুতো ভায়রাভাইয়ের শালীকে নিয়ে সেই ঘটনায় সোনামনি বৌদির দাওয়াইয়ের পর আর ঘেঁষেন নি তার “মনি”র দিকে।
তা যাকগে যাক, ওসব পুরোনো কথা। এখন আসি নতুন গল্পে।
দত্ত বাবুর পাশের পাড়ায় নতুন একটি মেয়ে এসেছে, মনে মনে যাকে “ফুলঝুরি” বলে ডাকেন দত্তবাবু। তা এই “ফুলঝুরি” অবিবাহিত, স্মার্ট, বয়স যাই হোক না কেনো দেখে 26 এর বেশি মনে হবে না। একই বাসে রোজ যাতায়াতের সূত্রে দত্ত বাবু ইনিয়ে বিনিয়ে আলাপটা ঠিক করেই ফেললেন। তারপর কখনো রেস্টুরেন্টে, কখনো সিনেমা হলে দেখা যেতে লাগলো দুজনকে।
এদিকে দত্ত বাবুর সেই পাড়াতুতো ভায়রাভাই বেণী বাবুর নজরে পড়তেই তিনি সটান চলে গেলেন দত্ত বাবুর স্ত্রী সোনা বৌদিকে এসব জানাতে।
ব্যাস আর যায় কোথায়….
সোনা বৌদি তো এসব শুনে হাত পা ছড়িয়ে কেঁদে, রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বেণী বাবুকে এই মারে কী সেই মারে, মানে দত্তবাবুর ওপরের রাগটাই আর কী হাতের সামনে বেণী বাবুকে পেয়ে……
অনেকক্ষণ শলা পরামর্শ করার পর দুজনে বেশ খানিক হো হো করে হেসে উঠলেন।
ওদিকে দত্ত বাবু বাড়ি ফিরে দেখলেন তার বৌ বাপের বাড়ি গেছে, দুদিন পর ফিরবে, একটা কাগজে লিখে রেখে গেছে, একটু অবাক হলেও দত্ত বাবু আনন্দে লাফিয়ে উঠে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলেন তার “ফুলঝুরি”কে, রাতটা তার সাথে কাটানোর জন্য। “ফুলঝুরি”ও রাজি। কথা হলো রাত 12টা বাজলে দত্ত বাবু চুপিচুপি সদর দরজা খুলে দেবেন যাতে পাড়াপড়শী কেউ টের না পায়।

রাত বারোটা নাগাদ হঠাৎ একটা আওয়াজ পেয়ে দত্ত বাবু ছাদে উঠে দেখেন সাদা শাড়ি পড়ে এলোচুলে দাঁড়িয়ে আছে একজন মহিলা, খানিকটা ঘাবড়ে গেলেও তিনি ভাবলেন তার আদরের “ফুলঝুরি” বুঝি তাকে surprise দিতে এসেছে এইভাবে।গদগদ হয়ে এগিয়ে যেতেই সে বলে উঠলো “কী রেঁ হ্যাঁরামজাদা, খুঁব যে দেখি তোঁর শখ, বৌ নেইঁ বলে ফুত্তির বাঁন ছুঁটেছে তাইইঁইঁ না… দাঁড়া আঁজ তোঁর এঁকদিন কি আঁমার এঁকদিন।”
এই বলে যেই না সেই নারী মূর্তি দত্ত বাবুর দিকে এগিয়েছে দত্তবাবু “বাবাগো মাগো” বলে পেছন ফিরে ছুটতে গিয়ে দড়াম করে চাড্ডি কলার খোসায় আছাড় খেয়ে পড়লেন মুখ থুবড়ে। এর মধ্যেই শুনতে পেলেন বাইরের দরজায় কেউ খট খট আওয়াজ করছে। এদিকে ততক্ষনে নাটকের পর্দা পড়ে গেছে, সাদা শাড়ি পড়া মহিলা আর কেউ নয় দত্তবাবুর বিয়ে করা একমাত্র বৌ অর্থাৎ আমাদের সোনামনি বৌদি এবং বৌদির সহকারী দত্তবাবুর সেই পাড়াতুতো শালা বেণীবাবু, যিনি সময় মতো কলার খোসাগুলো দত্তবাবুর পায়ের কাছে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন ছাদের অন্ধকারে লুকিয়ে থেকে।
দত্ত বাবু আর কিছু ভাবতে পারলেন না, কলার খোসায় পিছলে গিয়ে যদিও বেশ লেগেছে কোমরে তবু টুঁ শব্দটি না করে মড়ার মতো পড়ে রইলেন ছাদে।
ওদিকে নিচে সারা পাড়া জাগিয়ে সোনামনি বৌদি আর ফুলঝুরির তরজা চলছে….

আপনারা কিছু খবর জানেন নাকি তারপর দত্ত বাবুর কি হলো? জানলে জানাবেন আমাকে কেমন!

Loading

Leave A Comment